#লটকন #কৃষি #বাগান #গ্রাম
বাংলাদেশ ও উত্তর-পূর্ব ভারতে ফলটি, "বুবি" বা "Bubi" নামে সর্বাধিক পরিচিত। তাছাড়া "লটকা" " আঁশফল" ইত্যাদি আঞ্চলিক নাম ও আছে। ফলটি ত্রিপুরা কাছাড় বাংলাদেশ অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে ফলে। সাধারণত মিষ্টি ফল হলেও ছায়াযুক্ত জায়গায় এই গাছের ফল টক স্বাদযুক্ত। আষাঢ় শ্রাবণ মাসে সময় এটি পরিপক্ক হয়। আষাঢ়ের রথযাত্রা উৎসবে "হরিরলুট" (ফল বিতরণ) এর কলা আনারস নারিকেল এর পাশাপাশি "বুবি" ও হরিরলুট এর অন্যতম ফল।
লটকন বৃক্ষ ৯-১২ মিটার লম্বা হয়, এর কাণ্ড বেটে এবং উপরাংশ ঝোপালো। পুং এবং স্ত্রী গাছ আলাদা; যাতে আলাদা ধরনের হলুদ ফুল হয়, উভয় রকম ফুলই সুগন্ধি। ফলের আকার দুই থেকে পাঁচ সেমি হয়, যা থোকায় থোকায় ধরে। ফলের রঙ হলুদ। ফলে ২-৫ টি বীজ হয়, বীজের গায়ে লাগানো রসালো ভক্ষ্য অংশ থাকে, যা জাতভেদে টক বা টকমিষ্টি স্বাদের। এই ফল সরাসরি খাওয়া হয় বা জ্যাম তৈরি করা হয়। এর ছাল থেকে রঙ তৈরি করা হয় যা রেশম সুতা রাঙাতে ব্যবহৃত হয়।[১] এর কাঠ নিম্নমানের। ছায়াযুক্ত স্থানেই এটি ভাল জন্মে।
বাংলাদেশে একসময় অপ্রচলিত ফলের তালিকায় ছিল লটকন। অধুনা এর বাণিজ্যিক উৎপাদন ব্যাপক আকারে হচ্ছে। উন্নত জাতের সুমিষ্ট লটকনের চাষ বৃদ্ধির সাথে সাথে এর জনপ্রিয়তাও বেশ বেড়েছে। এদেশের নরসিংদীতেই লটকনের ফলন বেশি। এ ছাড়া সিলেট, নেত্রকোণা, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, গাজীপুর—এসব জেলায়ও ইদানীং বাণিজ্যিক ভিত্তিতে লটকনের চাষ হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে লটকন বিদেশেও রফতানি করা হয়।[২] লটকনে আছে অ্যামাইনো অ্যাসিড ও এনজাইম যা দেহ গঠন ও কোষকলার সুস্থতায় সহায়তা করে।
লটকনের উন্নত জাত, মাটি ও রোপণের মৌসুম
ভালো ও উন্নত জাতের চারা বা কলম লাগাতে হবে। বারি লটকন-১ সবচেয়ে ভালো জাতের লটকন এবং এ জাতটি সারা দেশে চাষোপযোগী। এছাড়াও আছে বাউ লটকন-১। লটকনের চারা সংগ্রহ করে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে রোপণ করা উত্তম তবে বর্ষার শেষের দিকে অর্থাৎ ভাদ্র-আশ্বিন মাসেও চারা লাগানো যাবে। লটকন স্যাঁতসেঁতে ও আংশিক ছায়াযুক্ত পরিবেশে যেমন আম বা কাঁঠালের মতো বড় গাছের নিচেও ভালো জন্মে কিন্তু জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। ৮-১০ দিন পানি জমে থাকলে গাছ মরে যেতে পারে। এজন্য পানি দাঁড়ায় না অথচ বৃষ্টিপাত বেশি হয় এমন এলাকায় বেলে-দো-আঁশ মাটি লটকন চাষের জন্য বেশি উপযোগী।
বাগান ব্যবস্থাপনা
*প্রথমেই লটকনের বাগানে কয়েকটি পুরুষ ও অধিকাংশ স্ত্রী কলম সংগ্রহ করে লাগানো উচিত। তাতে পরাগায়নের সুবিধা হবে ও অধিক লাভবান হওয়া যাবে। লটকনের কেবলমাত্র ফুল আসার পরই স্ত্রী ও পুরুষ গাছ চেনা যায়। তখনই বাগানে শতকরা ২০ ভাগ পুরুষ গাছ রেখে বাকি পুরুষ গাছগুলো কেটে ফেলতে হবে। সেখানে আবার নতুন চারা লাগাতে হবে। তবে এই সমস্যা দূর করতে হলে প্রথমেই বাগানে লটকনের স্ত্রী কলম লাগানো উচিত।
*বর্ষার প্রারম্ভে চারা রোপণের ১০-১৫ দিন পূর্বে ৭ী৭ মিটার দূরত্বে ১x১x১ মিটার আকারের গর্ত করতে হবে। গর্ত প্রতি গোবর ১৫-২০ কেজি, টিএসপি ৫০০ গ্রাম এবং এমওপি ২৫০ গ্রাম সার মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে রেখে দিতে হবে। মাটি শুকনো হলে গর্তে পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিতে হবে। গর্ত করার ১০-১৫ দিন পর ভালভাবে আবার কুপিয়ে চারা বা কলম লাগাতে হবে।
*চারা লাগানোর পরপরই পানি ও খুঁটি দিতে হবে। প্রয়োজনে বেড়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
*চারা রোপণের প্রথম দিকে ঘন ঘন সেচ দেয়া দরকার।
ফল ধরার পর দু-একটা সেচ দিতে পারলে ফল বড় হয় এবং ফলন বেড়ে যায়।
*একটি থোকায় বেশি ফল থাকলে পাতলা করে দিতে হবে। ফল আহরণের পর গাছের মরা, রোগাক্রান্ত ও কীটাক্রান্ত ডাল ছাঁটাই করে দিতে হবে।
*প্রতি বছর পূর্ণ বয়স্ক গাছে নিম্নরূপ হারে সার প্রয়োগ করতে হবে:
*উপর্যুক্ত সার গাছের গোড়া থেকে ১ মিটার দূরে যতটুকু জায়গায় দুপুরবেলা ছায়া পড়ে ততটুকু জায়গা কুপিয়ে মাটি আলগা করে সারগুলো ছিটিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে।
コメント